যেতে যেতে দুয়ার হতে.. (ছোট গল্প) Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:১৬:০৭ সন্ধ্যা



আমার ভুবনে আমি একা।

বড্ড নিঃসঙ্গ! সবাই থেকেও যেন নেই। নিজের থেকে নিজেই যখন দূরে সরে যায় কেউ, তখন চেতনায় দীর্ঘশ্বাসের জমাট বাষ্পে পরিচিত ছায়াগুলোকেও কেমন ঝাপসা দেখায়! আমার বেলায়ও তাই হয়েছে।

আমি এখন আর আমাতে নেই। অন্য কেউ-কিছু একটা আমাকে দখল করেছে। এক মরণব্যাধি ধীরে ধীরে আমাকে গ্রাস করে চলেছে। সবাই জানে। আমিও... অথচ অন্যরা এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি। আমিই পৃথিবীর সব থেকে সুস্থ মানুষ... একমাত্র সুস্থ মানুষ! নীরবে চোখের জল মুছে মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে আমার কাছে আসে। কিন্তু চোখের জল মুছলেই যে হৃদয়ে কান্নার দাগ লুকোনো যায়না- এই চরম সত্যটা বুকে ধারণ করে অভিনয়ের জন্য হয়তো তাঁরা অস্কারের নমিনেশন পেতে পারবে। কিন্তু ক্যান্সারের সাথে বসবাসকারী এই যুবকের সামনে ওদের মিথ্যাচারগুলো যে কত অবলীলায় ধরা পরে যায়, তা কি ওরা বুঝে?

ওরা বলতে খুব কাছের তিনজন মানুষ। আর একসময়ে তাঁদের থেকেও কাছে আসা... এখন অনেক দূরে সরে যাওয়া আরো একজন। কাছের তিনজন হলেন আমার বড় ভাই, ভাবি এবং ছোট বোন। বাবা-মা হারা তিন ভাইবোনের এই ফ্যামিলিতে 'ভাবি' নামের অন্য একজন 'আউটসাইডার' নিজের ভিতরের মমতার ডালি খুলে দিয়ে আমাদের পিঠাপিঠি দু'ভাইবোনকে তাঁর ন্যাওটা বানিয়ে নিয়েছিলেন! বড় ভাইয়া আমার থেকে দশ বছরের বড়। আমি আর রূম্পা দুই বছরের ছোট বড়। বাবা-মা দুজনেই গত হয়েছেন আজ আট বছর হল। সেই থেকে আমাদের দুই ভাইবোনকে সহ বাবার রেখে যাওয়া হামিদ গ্রুপ এবং এর ছোট বড় কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ভাইয়া-ই শক্ত হাতে আগলে রেখেছেন। একাই সব দিক সামলিয়েছেন। আমার মাস্টার্স কমপ্লিট হবার পরে আমাদের দুজনের জোরাজুরিতে বিয়ে করলেন। জীবনের পঁয়ত্রিশটি বসন্ত তখন ইতোমধ্যে পার করে দিয়েছেন। এমনই বাবার মতো বড় ভাই যখন আমার চোখের দিকে তাকাতে পারেন না... ভাব করেন আমার কিছু-ই হয়নি... তখন নিজেকে সামলাতে পারি না। কিন্তু ক্যান্সার রোগীদের আবেগ থাকতে পারবেনা। নিরাবেগী হয়ে তাদেরকে সবদিক সামলে চলতে হবে!

ক'টা বাজে এখন?

আমার কাছে সময় ইদানিং সময় স্থির! ঘড়ির টিক টিক শব্দ আমাকে বেঁধে দেয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই আমার এই রুমে কোনো ঘড়ি রাখতে দেইনি। আমি নিজেই। দক্ষিণ সাইডের বেডসাইড উইন্ডোটি হাল্কা নীল কার্টেনে ঘেরা। ওটা সরালেই নীল সমুদ্র দেখা যায়। হোটেলের এই স্যুইটটি আমার জন্য ভাইয়া ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর দিয়ে 'স্পেশাল' ভাবে সাজিয়েছিলেন। পুরো হোটেলটাই আমাদের। পৃথিবীর সব থেকে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিকে সামনে রেখে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। আমার চারিদিকে প্রাচুর্য্যের ছড়াছড়ি। নীচে হোটেলের কার পার্কে আমার টয়োটা স্পোর্টস কার'টি আমার মতো নিঃসঙ্গ পড়ে রয়েছে। ওর মসৃণ শরীরে হয়তো ধুলা জমে আছে... ওকে বিবর্ণ করেছে...আর আমাকে বিবর্ণ করছে মৃত্যুর কালো ছায়া!

রোগটা প্রথম যখন ধরা পড়ল, তখনই অনেক দেরী হয়ে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আমাকে দেখলেন... অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। শেষে একদিন আমাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে ভাইয়াকে একা ডেকে নিয়ে ডাক্তার কথা বললেন। কিছুক্ষণ পরে ভাইয়া আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। তবে সেদিনের ঐ মুহুর্তটা আমার আজীবন (জীবনের যতটুকু আর বাকি রয়েছে সে পর্যন্ত) মনে থাকবে। সুইং ডোর ঠেলে একজন বিধস্তপ্রায় মানুষ বের হলেন... যার সম্পদের পরিমাণ তিনি নিজেই জানেন না... হেঁটে হেঁটে আমার দিকে আসছিলেন। আমার দিকে চোখ পড়তেই মুহুর্তে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ঐ টুকু সময়ে তাঁর চোখে আমি আমার সর্বনাশ দেখে নিয়েছিলাম... দেখেছিলাম আমার ভবিষ্যৎ। ভাইয়াকে তখন একজন নিঃস্ব-কাঙ্গাল মনে হচ্ছিল।

আমি ডাক্তারের সামনে বসলাম। টুকটাক কথাবার্তার এক পর্যায়ে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ' ইয়ং ম্যান, তোমার শরীর এখন কেমন?' আমি ওর মুখের ওপর হাসলাম। একে তো নমিনেশন বাদ দিয়ে সরাসরি অস্কার দিয়ে দেয়া উচিত। অভিনয়ের জন্য অবশ্য।সব জেনেও কেমন অভিনয় করছে। বললাম, ' আমার থেকে তোমারই ভালো জানা উচিত।' ওর মুখের হাসিটা একটুও ম্লান হলনা। পেশাদারিত্বের চরম পরকাষ্ঠা সেদিন সেই বিশেষজ্ঞের চেম্বারে বসে দেখলাম। আমার আর এখানে কোন থাকার প্রয়োজন নেই বলে সে তাঁর ডান হাতটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আমি স্থির থেকে ভাইয়াকে রুমের বাইরে যেতে অনুরোধ করলাম। ডাক্তারের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করে ভাইয়া বের হয়ে গেলেন। এবারে আমি ডাক্তারের হাতকে নিজের হাতে নিয়ে বললাম, 'ওয়েল, ওল্ড চ্যাপ, এখন বলো আমার হাতে আর কতদিন আছে?'

আমার খুব পানির তেষ্টা পেয়েছে। উঠে বেডসাইড টেবিল থেকে পানি খেলাম। রুমটা অনেক অন্ধকার। এখন এভাবে থাকতেই আমার আরাম লাগে। একসময় অন্ধকারকে প্রচন্ড ঘৃনা করতাম। আলো আর আলোয় ভরা এক উচ্ছশৃংখল জীবনের মালিক ছিলাম। শরীরের উপর যথেস্ট অত্যাচার করেছি... প্রচুর সিগ্রেট টানতাম... সেখান থেকেই মরণব্যাধি আমার দেহকে বেছে নিয়েছে নিজের পুষ্টি পাবার জন্য। আমিও জীবনকে উপভোগ করার এমন কোন পথ বাকি রাখতাম না... আজন্ম এক বোহেমিয়ান লাইফ লীড করে এসেছি। আজ নির্জন একটি রুমে একাকী অন্ধকারকে পরম নির্ভরতায় সঙ্গী করেছি। আলো... রোদ এখন অসহ্য লাগে। এগুলো আমাকে আমার অক্ষমতাকেই জানান দেয়।

তিনমাস সময় হাতে নিয়ে দেশে এসেছিলাম। আর ক'দিন যেন বাকি আছে? সব কিছু কেমন ভুলে যাচ্ছি আজকাল। ভাইয়া আমাকে গুলশানের বাড়িতেই রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি এখানেই থাকতে চাইলাম। সমুদ্রের প্রতি আমার আগ্রহ সেই ছেলেবেলা থেকেই। সমুদ্রের নীল জলরাশির প্রতি ভালোবাসা আমাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াতো। জীবনের শেষ দিনগুলো সেই সমুদ্রের সাথেই কাটাচ্ছি আমি। ভাইয়া-ভাবী আর রূম্পা প্রতি সপ্তাহে আসে। আমি-ই বলেছি এভাবে আসতে। এখানে দেখাশোনা করার লোকের অভাব নেই। বেল টিপলেই কেউ না কেউ এসে হাজির হয়।

আস্তে আস্তে জানালার সামনে দাঁড়াই। পর্দা সরিয়ে দিতেই আলোর অসহ্য ঝলকানি আমাকে কয়েক মুহুর্ত অন্ধ করে রাখল। আলো সয়ে এলে চোখ খুলে ব্যালকনিতে যাই। এখন বিকেল। শেষ বিকেল... দিনেরও... জীবনেরও কি? এটাই হয়তো আমার দেখা শেষ বিকেল! আজকের বিকেলটি আমার কাছে তেমন কোনো অনুভূতি আনেনা। বাইরে সোনাঝরা রোদ... উন্মুক্ত নীলাকাশ... নীল জলরাশি আর মুহুর্মুহু ঢেউয়ের গর্জন... নীল শাড়িতে একজন নীলাম্বরী! এই একই রুমে... এই ব্যালকনিতে... ওর সাথে কাটতো কত গল্প বলে... একদিন এখানেই সে আমার হাতটি ধরে বলেছিল আমাকে, ' ভালোবাসি!' এখন কোথায় সে? আমার ক্যান্সার হয়েছে জানার পরেও সে কয়েকবার এসেছে। তবে বিদেশ থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হবার পরে সেও আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে। এটা ওর নিজের ইচ্ছায় নাকি ওর বাবা-মায়ের ইচ্ছায় খুব জানতে ইচ্ছে করে! সেতো নিজের ইচ্ছাতেই আমাকে ভালোবেসেছিল... তবে চলে যাবার বেলায় কেন অন্যের ইচ্ছের দোহাই দেয়া?

একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে কে-ই বা ভালোবাসবে!!

তবে সরাসরি আমাকে বললেই পারতো নীলা।

এই লুকোচুরির কোনো দরকার ছিলনা। এখন আমার কোনো কিছুতেই কিছু আসে যায়না। কে এলো, কে গেল্‌ কোনো মাইনে রাখে না। আচ্ছা, আমি কি নীলাকে মিস করছি? বোধহয়। তবে ক্যান্সার রোগীদের কাউকে মিস করারও অধিকার নেই... কাউকে মনে করে কষ্টও পেতে হয়না তাঁকে। কারন অহর্নিশি নিজের ভিতরে দুর্দান্ত কষ্টরা ডানা মেলে থাকে! তবে এই রোগীদের কিসের অধিকার রয়েছে, কেউ বলবে কি আমাকে? অণুক্ষণ প্রচন্ড এক যন্ত্রণা... বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট কিছু সময়...আর শেষের সেই ভয়ংকর মুহুর্তের অপেক্ষা করা... একসময়ের ভালোবাসাময় চোখগুলো কীভাবে কনভার্ট হয়ে ভাষাহীন করুনাময় চোখে পরিণত হয় সেগুলো চেয়ে চেয়ে দেখার অধিকার? একজন নীলা কীভাবে একজন অপরিচিতা হয়ে উঠে এবং চলে যায়... বিষন্ন চোখে তা দেখা আর অণুক্ষণ তা উপভোগ করা? আমিতো এগুলো চাইনি? তবে আমার সাথেই কেন?

সুদর্শন ছিলাম। আমার চুল সবার দৃষ্টি কেড়ে নিতো। ভার্সিটির মেয়েরা পাগল ছিল এই চুলের। নীলা বলতো , 'একটা স্কার্ফ পড়ে থাকবে বাইরে বের হবার সময়। অন্য কোনো মেয়ে তোমার চুল দেখবে তা চাইনে।' কেমো দেবার পরে আমার আরো অনেক কিছুর মত সেই চুলও নেই। এখন আমি পঁচিশ বছরের লোলচর্মসর্বস্ব এক কুকুরের মতো! আমার রুমে ঘড়ির মতো কোনো আয়নাও নেই। নিজেকে এখন মনের চোখ ছাড়া আমার দেখবার কোনো উপায় নেই। অবশ্য অন্যের চোখে এখনো তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় নিজেকে দেখতে পাই। তবে তা অতোটা সুখকর নয়।

গত সপ্তাহে বন্ধুরা আমাকে দেখতে এসেছিল। কয়েকজনকে তো নিজের দুর্বল হয়ে যাওয়া স্মরণশক্তির জন্য চিনতে পারলাম না। আর কয়েকজন তাঁদের নিজেদের দুর্বলতার জন্য তাদেরকে চিনতে দিলোনা। এরাই ছিল আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী... নেশার... তাসের আড্ডার... জীবনের মানে খুঁজতে যাবার...আর আজ এদের চোখে আমার জন্য ভালোবাসাহীন এক দায়সারা আবেগ!

নিজের কাছে মোবাইলও রাখিনা। ভাইয়া হোটেলের ম্যনেজারের নাম্বারে কল করে আমার সাথে কথা বলেন। এখন বেশীক্ষণ কথাও বলতে পারিনা। দরোজা নক করে একজন মোবাইল হাতে এলো। ভাইয়ার ফোন। আমার কাছে জানতে চাইলেন কিছু লাগবে কিনা? বড্ড বলতে ইচ্ছে হল, আমাকে আরো কিছুটা সময় পারলে এনে দিতে। কিন্তু বললাম, ' কিছু লাগবে না।' ওপাশে অনেকক্ষণ ভাইয়া চুপ করে আছেন। আমিও নীরব। বুঝতে পারছি তিনি কাঁদছেন। আমি যে ওনার কাছে ছেলের মতন। আমাদের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো সন্তান নেননি। স্রষ্টার কাছে এই মুহুর্তে প্রার্থনা করলাম, ' যদি পারো আমাকে আবার অন্য কোনো জনমে ভাইয়ার সন্তান করে পাঠিয়ো।' হঠাৎ কি হল, ভাইয়াকে বললাম, ' একবার নীলাকে দেখতে ইচ্ছে করে।' মোবাইলটা ফেরত দিতে বেল বাজালাম। ভাইয়ার সাথে আমার শেষ কথাই কি হয়ে গেলো?

কীভাবে দিন আসে... চলে যায়... রাত ভোর হয়... সুর্য উঠে... চাঁদ হাসে এগুলো আমার অনুভূতি থেকে বিদায় নিয়েছে। তাই দরোজা ঠেলে নীলা যখন এলো, আমি বুঝতে পারলাম না এটা রাত না দিন। তবে ঘর আলো করে সে যে এসেছে তা বুঝতে পারলাম। সে এসে আমার বিছানার সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো। এই নীলা আর সেই নীলা! এই আমি আর সেই আমি! মাঝখানে এক মরনব্যাধি... লুপ্তপ্রায় ভালোবাসা। ভালোবাসারা কি একদিন এভাবে মরনব্যাধির কাছে হার মেনে শেষ হয়ে যাবে?

নীলা এখনো আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। পাশে এসে বসলো না। আমি বললাম, ' কি দেখছ?' কিন্তু নিজের কাছেই নিজের আওয়াজকে অপরিচিত লাগল। নীলা এবার আমার পায়ের কাছে আসে। বসে। ওর শরীর থেকে কি ভালবাসার ঘ্রাণ বের হচ্ছিল... সে কি আমার পাশে বসে মৃত্যুর ঘ্রাণ অনুভব করছে। ওর চোখ দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। নীলা বলল, ' কেমন আছ?' আমি হাসলাম। বললাম-

' ভালো আছি।'

- কেন মিথ্যে বলছ?

'তুমিই বা কেন মিথ্যে বলাচ্ছ?'

দুজন চুপ করে রইলাম। কথা যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। দুজন মানুষ একসময়ে ভালবাসার টানে একে অপরের কাছে এসেছিল। আজ একজনের ভিতরে কি এক ব্যাধি বাসা বানাতেই সেই ভালবাসার সৌধ ভেঙ্গে গেছে। এতোই পল্কা ভালোবাসা!

ওকে বললাম, ' তোমার গলায় সেই গানটা একবার গাইবে ?

- কোনটা?

' মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে?

'

একটু কি চমকায় নীলা? একটা গান কি ফেলে আসা কিছু নস্টালজিক মুহুর্তকে ফিরিয়ে আনতে পারে? মাথা নীচু করে থাকে সে। আমি অপেক্ষা করি। যেভাবে অপেক্ষা করছি শেষ সময়ের জন্য। নীলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গাওয়া শুরু করে... ওর হাত আমার কঙ্কালসার হাতকে ধরে রাখে... আমি কোনো অনুভূতি পাইনা... তবে ওর গান আমাকে ভালোলাগার এক সুন্দর মুহুর্ত এনে দেয়। খুব ভালো লাগে গানের কথা।

একসময় শেষ হয় গান... নীলা এখন চলে যাবে। যাবার বেলায় কোনো কথা হল না আর আমাদের। একেই বোধহয় নীরবে চলে যাওয়া বলে। দরোজা পর্যন্ত গিয়ে নীলা একবার পিছনে ফিরে চায়! ওর চোখে কি এক ফোটা জল দেখতে পেলাম? সে না ফিরলেই ভাল হতো কি! কি মনে করে ফিরলো কে জানে। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি... সেও তাকিয়ে আছে। নীলার চোখে কি সেই আগের ভালোবাসা ফিরে এলো? নাহ! এসব আমার মনের ভুল ভাবনা। একবার চলে গেলে কেউ আর ফিরে আসেনা। একবার ভাবলাম নীলা যদি দরোজার ওখান থেকে ফিরে আমার কাছে আসে, হয়তো শেষ একবার চেষ্টা করতাম! বেঁচে থাকার...

নীলা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে... দরোজাকে সাথে নিয়ে। এক পা সামনে বাড়ালেই ওর মুক্ত জীবন... আর এক পা পিছনে আসলেই আমাকে নিয়ে ওর জন্য এক নতুন জীবনের অনিশ্চয়তা। নীলা কি ফিরবে? নীলারা কি ফিরে আদৌ? এটাই ছিল আমার চেতনায় শেষ অনুভূতি... ... ... Rose Good Luck

বিষয়: সাহিত্য

১৮০৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258891
২৭ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : Very heart breaking and touching story. Jajakallah vaiya. Plz keep writing.
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৫৭
202789
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। একজন ক্যান্সার রোগির জীবনের শেষ কিছু অনুভূতি নিজের কল্পনায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।Good Luck
258909
২৭ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : এত প্রেম,বিরহ,আবেগ আর রোমান্টিকতা নিয়ে রাতে ঘুমান কি করে মামুন ভাই?ধন্যবাদ হৃদয়স্পর্শী একটি লেখা শেয়ার করার জন্য।
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৫৯
202790
মামুন লিখেছেন : রাতেই তো লেখার কাজটি করি ভাই। সারাদিন পোষাক শিল্পে কাজ করি সেই সকাল ৮টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা ভাই।Good Luck
259050
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:৩৫
কাহাফ লিখেছেন : অসহ্য সুন্দর লেখেন আপনি।কষ্ট-যন্ত্রণা আর অব্যক্ত ভাল লাগার মিশ্রণে অন্য এক অনুভূতির শিহরণ জাগায় আপনার উপস্হাপনা। অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই.....। Rose Rose
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:০২
202791
মামুন লিখেছেন : আপনাদেরকে কষ্টে বিদীর্ণ করাটা আমার অনিচ্ছাকৃত। কীভাবে যেন এসে যায়।
আবারো আপনার অনুভূতির মায়াজালে আমি মুগ্ধ হলাম।
ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।Good Luck
259299
২৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২২
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন :

বারেক তোমায় শুধাবারে চাই বিদায়কালে কি বল নাই,
সে কি রয়ে গেল গো সিক্ত যূথীর গন্ধবেদনে॥
মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে......।


ব্লগে সাহিত্যিকের অভাব ছিল। গল্পকারের শূন্যস্থান পূরণের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে Happyভালো লাগলো Good Luck Good Luck
২৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:৩৯
203141
মামুন লিখেছেন : আপনাদের মাঝে নিজের সুপ্ত অনুভুতিগুলোকে অক্ষরে রুপ দিচ্ছি মাত্র। জানি না তা সাহিত্যের কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, নান্দনিক মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck Good Luck
259333
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৬:৩২
আজিম বিন মামুন লিখেছেন : পড়লাম,কী বলব,গুছিয়ে রাখা মন্তব্যটা ভুলে গেলাম কেন?কষ্টটা একটু বেশীই পেলাম বোধ হয়।লেখকের কাছে কী পাঠকের দীর্ঘশ্বাস পৌছায় কোনভাবে?
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:০০
203231
মামুন লিখেছেন : অবশ্যই পৌঁছায়। আপনি নিজেও লেখক, ভালোই জানবেন এ ব্যাপারে। এই লেখাটি তো আপাদমস্তক কষ্ট নিয়েই। একজন ক্যান্সার রোগী যে মাত্র তিনমাসের সময় নিয়ে (ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিরিখে, না হলে আল্লাহপাকই সব কিছুর নির্ধারণকর্তা)দেশে ফিরে আসে মৃত্যুর প্রহর গুনতে। আমার কল্পনায় সেই বিভিষীকাকে তুলে ধরার এক অপপ্রয়াস ছিল এটি বলতে পারেন। লেখা নিয়ে পরীক্ষার এক প্রচেষ্টা ছিল এই লেখাটিও। আপনার কষ্ট পাবার জন্য নিজের মনও বিষাদ্গ্রস্ত হল। আমি মানুষকে আনন্দ দিতে চাই,কিন্তু কিভাবে মাঝে মাঝে কষ্ট দিয়ে দেই, নিজেও পাই। :(
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনার জন্য।Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File